বেশ কয়েক মাস আগে দেশের অন্যতম শিল্পপতির (টেক্সটাইল সেক্টরে) সাথে সাক্ষাত করেছিলাম যিনি খুব ভাল মনের মানুষ। বায়োমেডিকেল রিসার্চ ফাউন্ডেশনের কথা জেনে তিনি নিজে আমাদের সাথে কথা বলতে চেয়েছেন। সেখানে তিনি আরেক শিল্পপতি বন্ধুকেও আমাদের আলোচনা শুনতে ইনভাইট করেছিলেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা মিটিং-এ তিনি দারিদ্য বিমোচন নিয়ে কথা বললেন। একজনকে রিক্সা কিনে দিলে কি লাভ হয় তা বুঝালেন। বস্তির শিশুদের স্কুলে পড়ানোর ইস্যুও তুললেন। কিন্তু রিসার্চ করে কি ধরনের ভিজিবল বেনিফিট দেখার স্কোপ আছে? আমরা সেসময় আমাদের থ্যালাসেমিয়া রিসার্চ প্রজেক্টের কথা বললাম। আমরা পেপার লিখছি। দেশের একটি বড় প্রবলেমকে আমরা রিসার্চের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।এতে দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রানালায় হয়ত উদ্যোগ নিতে পারে। আগে তো প্রবলেমকে জানতে হবে, তাই না? দেশের প্রায় এক থেকে দেড় কোটি মানুষ থ্যালাসেমিয়ার বাহক। একটি পরিবারে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশু থাকলে পুরো পরিবারটি ধবসে পড়ে।এটি বোধগম্য থাকলে তা সমাধান করা যাবে। দেশের সরকার উদোগ নিলে মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ সেবা পাবে।আমরা অনেক চেষ্টা করেও বুঝাতে পারলাম না। তিনি মনে করলেন সেগুলো থিউরী,বাস্তবে সম্ভব না! ফেরার সময় মনে হলো সাধারন মানুষকে রিসার্চের ফাইন্ডিংস এর সুদূরপ্রসারী ইম্পেক্ট বুঝাতে আমাদের কিছু ভিজিবল আউটকাম সৃষ্টি করতে হবে।
মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে আমাদের থ্যালাসেমিয়া পেপারটি পাবলিশ হয়। পরবর্তীতে এটি ফেসবুকের মাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে পৌঁছে যায়। রংপুর মেডিকেল কলেজের একজন শিক্ষক তিনি ফেসবুকের মাধ্যমে সরকারের দৃষ্টিগোচর করেন। তিনি আমার সাথে পার্সোনালীও যোগাযোগ করে সেখানের আলোচনাতে অংশ নিতে বলেন। সেখানে দেশে যারা থ্যালাসেমিয়া নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে তারাও একত্রিত হন। অনেক ফলপ্রসূ আলোচনা হয়। অবশেষে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় মিটিং এর আয়োজন করেন। চিকুনগুনিয়াতে আক্রান্ত হওয়ার কারনে আমি মিটিং-এ যেতে পারিনি। তবে আমাদের পাবলিশ পেপারটি যোগসূত্র স্থাপনে ভূমিকা রেখেছে। আগত সদস্যদের সবাইকে ঐ পেপার কপি করে দেয়া হয়!থ্যালাসেমিয়া নিয়ে যাতে পলিসি হয় তা নিয়ে সেজন্য দেশের সিনিয়র বিশেষজ্ঞরা কাজ করে যাচ্ছেন। হয়ত কয়েক বছরের মধ্যে দেশের বিভিন্ন জায়গায় থ্যালাসেমিয়া স্ক্রিনিং এবং ডায়াগনোসিসের সিস্টেম গড়ে উঠবে যার ফলে মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ উপকৃত হবে। আমরা প্রজেক্টের শুরু থেকেই এই উদ্দেশ্যকে সময় এবং মেধা ব্যয় করেছিলাম।
আশা করি ঐ শিল্পপতির সাথে আবার সাক্ষাত করব। হয়ত তিনি এবার রিসার্চ আউটপুটের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারবেন! চিকুনগুনিয়া রিসার্চ প্রজেক্ট নিয়ে আমাদের অক্লান্ত এবং নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে ভবিষ্যত রোগীরা উপকৃত হবেন। আমাদের উচিত শুধু পজিটিভ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। বাকীটা আল্লাহ দেখবেন।
Comments